Welcome To RONY'S WORLD .
Html Codes

শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৪

সালমানের জন্য শোকগাথা

আচ্ছা মনে করে দেখা যায় বাংলাদেশের কোন নায়কের জন্য রিক্সাওয়ালার ছেলে থেকে শুরু করে বড়লোকের মেয়ে পর্যন্ত সবাই পাগল ছিল?একটু ভেবে হলেও উত্তরটা সালমান শাহ ই দিতে হবে।
সালমান কেমন অভিনেতা ছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর এখন দেওয়া যাবে না। সে সময় আসার অনেক আগেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন সালমান। তবে সালমান কতটা জনপ্রিয় ছিলেন? এই প্রশ্ন করাই বোধ হয় মূর্খতার পরিচায়ক।
মনে আছে সালমান কে নিয়ে এদেশে সৃষ্টি হওয়া ক্রেজ এর কথা। আমার আম্মা সালমান শাহ্‌র অনেক বড় ভক্ত ছিলেন। তারও তখন বয়স কম ছিল। সালমান হয়তবা নায়ক হয়ে তার স্বপ্নেও হানা দিতেন। আর আমি? বাংলাদেশে মনে হয় এই একজন নায়ক ছিলেন,যার মত আমি হতে চাইতাম। আমার বয়স তখন ৪-৫ বছর,ওই বয়সের কিছু মনে থাকার কথা না,কিন্তু অবচেতন মনে বেচে আছে অনেক কিছুই।মনে আছে,আম্মা যখন আমার চুল আঁচড়ে দিতেন,তাকে বলতাম সালমান শাহ্‌র মত চুল আঁচড়ে দিতে  আম্মা যখন বলতেন,সালমানের মত আমারও নাকি কপাল বড়, আয়নার সামনে গিয়ে দেখতাম,আম্মা সত্যি বলছে কি না!
মনে আছে,সিনেমা হলে গিয়ে দেখা প্রথম সিনেমার কথা। সালমান অভিনীত 'তোমাকে চাই'। যতদূর মনে আছে,নাচ গান সমৃদ্ধ একেবারেই মূলধারার সিনেমা,কিন্তু সেদিন গাড়ি নিয়ে এসে অনেককে সিনেমা হলে ঢুকতে দেখেছি। এই দৃশ্য বন্ধুদের সাথে 'মনপুরা' কিংবা 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার' দেখার সময়ও চোখে পড়েছে। কিন্তু বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে যে কয়েকবার শাকিব খান বা ডিপজলের ছবি দেখতে গেছি, একবারও এরকম দৃশ্য দেখিনি!
বলতে পারি আমার এক অ্যান্টির কথা। সালমানের মৃত্যুর খবর শোনার পর যাকে ঘরভরতি সালমানের পোস্টার এর মাঝে বসে কাদতে দেখেছি।
সালমানের মৃত্যু স্বাধীন বাংলাদেশেরই একটি বৃহত্তম রহস্য। ১৪ বছরেও যা ভেদ হয়নি। মৃত্যুর পরও সালমান নায়ক ই রয়ে গেছেন। তার বয়স আটকে গেছে ২৬ এই,সালমান তাই আঙ্কেল এর বয়স থেকে এখন আমার বড় ভাইয়ের সমতুল্য।
বেচে থাকলে এতদিন কি করতেন সালমান? তিনি খারাপ অভিনেতা, তার শত্রুরাও কোনদিন বলতে পারেনি। হয়ত মূলধারার ছবির পাশাপাশি শৈল্পিক ছবিতেও কাজ করে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিতেন। হয়ত এতদিনে তিনি আমাদের মুভি ইন্ডাস্ট্রির অমিতাভ বচ্চন, উত্তম কুমার, রাসেল ক্রো কিংবা আন্তনিও বান্দারাস এ পরিনত হতেন!
তিনি বেচে থাকলে হয়ত এদেশের মুভি ইন্ডাস্ট্রি হাসির পাত্রে পরিনত হত না। একজন ক্রিকেটার কোনদিন বলার সাহস পেত না 'আমি সিনেমায় নামলে এদেশের শীর্ষ নায়ক বেইল পাবে না'!!
এখন ঈদের সময়, সালমান বেচে থাকলে হয়ত বন্ধুরা মিলে তার ছবি দেখতে যেতাম, তার বদলে বাসায় বসে তার জন্য শোকগাথা লিখছি!আসলেই কি সালমান মারা গেছেন? হয়ত তিনি সশরিরে বেচে নেই, কিন্তু ভক্তদের 'স্বপনের নায়ক' হয়ে এখনও বেচে আছেন। নইলে কেন এখনও টিভি তে 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' কিংবা 'অন্তরে অন্তরে' কিংবা 'এই ঘর এই সংসার' দেখালে আমার আম্মা সব কাজ ফেলে টিভির সামনে এসে বসেন? কেন তার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি তাকে ১৪ বছর আগে ফিরে যেতে দেখি? জানা নেই।
শুধু এটুকু জানি, সালমান এর জীবন থেমে যাওয়ায় আমাদের সাংস্কৃতিক জগতের ভয়াবহ ক্ষতি হয়ে গেছে। যা আমরা এতদিনেও কাটিয়ে উঠতে পারিনি।
৬ সেপ্টেম্বর সালমান এর মৃত্যু বার্ষিকী। প্রতিভাবানরা মনে হয় বেশিদিন বাচেন না। তাই একজন সালমান, একজন তারেক মাসুদ কিংবা একজন আনোয়ারুল কবির দেশকে অনেক কিছু না দিয়ে, ফাকি দিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান।
আজ প্রতিটি টিভি চ্যানেল সালমান অভিনীত সিনেমা দেখাবে। ছেলেবেলার মহানায়কের সিনেমা আমি কিছুতেই মিস করব না!
আমরা তোমাকে ভুলব না...আমরা তোমাকে ভুলব না...
আমরা তোমাকে ভুলব না...আমরা তোমাকে ভুলব না...
আমরা তোমাকে ভুলব না...আমরা তোমাকে ভুলব না...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন